Wednesday 16 May 2012

ভাবছেন আষাঢ়ে?

তৃতীয় তলার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচতলায় পৌঁছালেও তাঁর হাত-পা কিছুই ভাঙল না। শুধু মাথায় আঘাত লেগে স্মৃতিশত্তি চলে গেল। দেশি-বিদেশি হাজারো চিকিসক, কবিরাজেও কোনো ফায়দা হলো না। শেষমেশ মাথার ওই জায়গায় আস্ত এক বাঁশের বাড়ি খেয়ে স্মৃতিশক্তি ফিরে এল

ভাবছেন এটা আষাঢ়ে গল্প?


হাজার হাজার টাকা খরচ করে আজকালের মায়েরা কত সাধ্য-সাধনা করছেন বাচ্চাদের বড় করতে। কিন্তু তাঁর মায়ের নিয়ে কোনো দিন ভাবতেই হয়নি। একটা গান গাইলেন, আর তিন মিনিটেই তাঁর ছেলে বড় হয়ে গেল। ভাবছেন গুল মারছি?
পূর্ণ তারুণ্যে তিনি এখন টগবগে। ভর্তি হলেন কলেজে। সারা বছর তিনি প্রেম করে বেড়ালেন, বিজয় দিবস কিংবা কলেজে নবীনবরণে গান গেয়ে বেড়ালেন। সব করতে দেখা গেল, শুধু পড়তেই দেখা গেল না। তবু পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন ইয়াহু! বলে তিনি লাফ দিলেন। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেন। কলেজের কৃতী ছাত্র হিসেবে বক্তৃতাও তিনিই দিলেন। এও সম্ভব!
কলেজের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও আজ তিনি বেকার, পথে পথে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরলেন, জুতাও পলিশ করলেন, কিছুতেই ভাগ্য ফিরল না। অবশেষে কিনলেন এক লটারির টিকিট এবং প্রথমবারেই কেল্লা ফতে! মুহূর্তে কোটিপতি, রমরমা অবস্থা
একটু অপেক্ষা করুন, এটা আষাঢ়ে গল্প নয়!ছিনতাইকারীর পাল্লায় পড়ে কখনো নাস্তানাবুদ হয়েছেন? টাকা না থাকলেও গায়ের জামা নিশ্চয়ই হারিয়েছেন?
তাঁর ঘটনা উল্টো। নিরস্ত্র একজন মানুষ, খালি হাতে ১০ জন মানুষকে লাশ করে ফেললেন। ছুরি, চাপাতি, হকিস্টিক- সবই ফেল মারল, এমনকি বন্দুকের গুলিতেও কিছু হলো না; গুলি পিছলে গেল, দাঁত দিয়ে আটকে ফেললেন!
কোনো এক দুর্ঘটনায় পরিবার থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন। না পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, না মাইকে ঘোষণা, তবু তিনি ফিরে পেলেন হারানো মা, বাবা, ভাই-বোন। কীভাবে?
একটি গান গেয়ে, যা তিনি ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছিলেন। বুঝতে পারছি না গানের মহিমা, নাকি গলার জোরের মহিমা! যা- হোক, এটাও আষাঢ়ে গল্প নয়।
গুন্ডা-বদমাশ কিংবা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁর মাথা ফেটে গেছে। হাত-পা, গলা, মুখ-কিছুই অক্ষত নেই। কিন্তু সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো, কোনো দাগও তাঁর শরীরে নেই! কোনো প্লাস্টিক সার্জারি ছাড়াই তিনি আগের মতোই ঝকঝকা, ফকফকা। তবে হ্যাঁ, স্পটক্রিমও তিনি ব্যবহার করেন বলে কেউ দেখেনি
বলছি তো, এটি কোনো আষাঢ়ে গল্প নয়!গরিব ঘরের সন্তান, ঠিকমতো খেতে পান না। তার পরও তাঁর পোশাকের অভাব নেই। যেকোনো সময়, যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো পোশাক পেয়ে যাওয়া তাঁর বাঁ হাতের খেল। আর সেই সব পোশাকও বাহারি, ঝলমলে নতুন। আর পোশাকের ডিজাইন? সেটা সম্পূর্ণ তাঁর মেজাজের ওপর নির্ভরশীল!প্রেমিকার সঙ্গে ডেটিংয়ে যাওয়া নিয়ে তাঁকে কোনো দিন চিন্তা করতে হয় না। কী পরবেন, কী বলবেন কিংবা কোন চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসবেন-এসব চিন্তা দূরে থাক, তাঁকে আসার ভাড়াটাও জোগাড় করতে হয় না। বিদেশে থাকলে তাঁকে কুমির নদী পার করে দেয়। নইলে তিনিই দৌড়ে চলে আসেন। দূরত্ব তাঁর কাছে কোনো ব্যাপারই না! স্ট্যামিনা বটে
যা- বলুন না কেন, এটা মোটেই আষাঢ়ে গল্প নয়!গান গাওয়া আজকাল খুব বেশি কঠিন কিছু না, অনেকেই জানেন। কিন্তু তালের আকালের যুগে তাঁর কণ্ঠে নিঁখুত তাল লয়সমৃদ্ধ গান বেজে ওঠে। আর বাদ্য? সে তো না চাইতেই হাজির। অলৌকিকভাবে গান বাজনা আকাশে-বাতাসে ভাসতে থাকে। শুধু তাঁর মেজাজের ওপর নির্ভর করে গানটা রোমান্টিক হবে, নাকি দুঃখের হবে
এও সম্ভব, সত্যি বলছি।
নির্দ্বিধায় তিনি মানুষ হত্যা করেন। জোতদার, অপরাধী, যে- তাঁর ক্ষতি করে থাকুক না কেন, তার মৃত্যু অবধারিত। এবং সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো তার কখনো ক্রসফায়ার হয়না, হত্যার শাস্তি মাত্র ছয় মাস হাজতবাস
হাজত শেষে সসম্মানে ফুলের মালা দিয়ে তাঁকে বরণ করে এলাকাবাসী।
পাঠক, ভাবছেন এতক্ষণ যেসব কথা বলছি পুরোটাই আষাঢ়ে গল্প? ফালতু কথা? মোটেই না

যার কথা বলছি তিনি আমাদের অতি পরিচিত-তিনি একজন টলিউড বাংলা সিনেমার নায়ক

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০০৯




No comments:

Post a Comment